নিউজ ডেস্কঃ অবশেষে টকশো কাপানো রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান বহুমুখী শঠতার প্রতিভাধারী স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতিবাজ ধূর্ত সাহেদকে র্যাবের চৌকস অফিসারদের হাতে ধরা পরতেই হলো। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি বিরোধী জিরো টলারেন্সের কারনে তাকে শেষ পর্যন্ত আইনের কাছে নতিস্বীকার করতে হলো। রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতি ধরাপরার পর সংবাদমাধ্যম ও সোস্যালমিডিয়ায় বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এমপি মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠতার ছবিসহ সাবেক বিএনপি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের ছবি প্রকাশ হতে থাকে। দেশের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন প্রতারক এই সাহেদ। গ্রেফতার এড়াতে চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে। অবশেষে আজ বুধবার (১৫ জুলাই) র্যাবের সঙ্গে হেলিকপ্টারে চেপে রাজধানীতে ফিরেছেন তিনি। সকাল ৯টায় তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার। অবতরণের পর সংবাদ সম্মেলনে সাহেদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, আজ বুধবার (১৫ জুলাই) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের ইছামতী খালের পাশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের ইছামতী খালের বিপরীত পাশেই অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। ভোররাতেই ওই সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের কথা ছিল সাহেদের। কিন্তু আমাদের গোয়েন্দা দল সেখানে অবস্থান নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত অতিক্রমের জন্য বার বার পরিকল্পনা পরিবর্তন করছিলেন সাহেদ। সর্বশেষ সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে তিনি জেলার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামে লবঙ্গবতী নামে একটি খাল আছে। তার আরো একটি খালে আছে ইছামতী। এই খালেরই বিপরীত পাশে ভারত সীমান্ত। সীমান্ত ঘেষে নদী থাকলে তার বিপরীত পাশে কাটাতারের বেড়া ও পাহারা দুর্বল থাকে। ফলে সাহেদ এই স্থানটিকে বেছে সীমান্ত পার হওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত সোমবার (৬ জুলাই) রাতে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে র্যাব। এতে করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মেলে। অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় অভিযানে।
মঙ্গলবার রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ (৪৩), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজ (৪০), অ্যাডমিন আহসান হাবীব (৪৫), এক্সরে টেকনিশিয়ান হাসান (৪৯), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হাকিম আলী (২৫), রিসিপশনিস্ট কামরুল ইসলাম (৩৫), রিজেন্ট গ্রুপের প্রজেক্ট অ্যাডমিন রাকিবুল ইসলাম (৩৯), রিজেন্ট গ্রুপের এইচআর অ্যাডমিন অমিত অনিক (৩৩), গাড়িচালক আব্দুস সালাম (২৫), এক্সিকিউটিভ অফিসার আব্দুর রশীদ খান জুয়েল (২৮), হাসপাতাল কর্মচারী তরিকুল ইসলাম (৩৩), স্টাফ আব্দুর রশিদ খান (২৯), স্টাফ শিমুল পারভেজ (২৫), কর্মচারী দীপায়ন বসু (৩২) এবং মাহবুব (৩৮)। অপর দু’জনের নাম জানা যায়নি।
মঙ্গলবার রোগী স্থানান্তরের পর উত্তরা ও মিরপুরের দুটি হাসপাতালই সিলগালা করে দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিন সিলগালা করা হয় রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়।